প্রশ্নব্যাংক? বই? নাকি গাইড? নাকি…!
ভর্তি পরীক্ষার্থীদের প্রথম প্রশ্ন গুলোর মধ্যে একটা হচ্ছে পাঠ্য বিষয়গুলো কোথা থেকে পড়ব?
আসলেও ব্যাপারটা বেশ কনফিউজিং। বই, গাইড, কনসেপ্ট বুক, স্পেশাল নোট, বিগত বছরের প্রশ্নগুলো নিয়ে আছে প্রশ্নব্যাংক আরো কত কী! এত এত জিনিস। সব কি পড়ব? সময় তো নেই। তাহলে কোনটা পড়ব?
উত্তর হচ্ছে সহজ। বই পড়বে। বইয়ের বিকল্প কিছুই নেই । কোচিং সেন্টারগুলো যত যা কিছুই দিবে তোমাকে সব কিছুর উপরে বই। কারণ ভর্তি পরীক্ষার ৯৯% প্রশ্ন নিঃসন্দেহে তোমার পাঠ্যবই থেকেই হবে। পাঠ্যবইয়ের সম্পূর্ণটা যে ভালমত বুঝে পড়বে, সে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে স্থান পাবেই।
কোচিং সেন্টারগুলো হয়ত তাদের বিশেষ বই/নোট থেকে মডেল টেস্টের প্রশ্ন তৈরি করতে পারে, যা দেখে তোমার মনে হবে বই ছেড়ে ওগুলো পড়েই বুঝি সব হবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে আসল পরীক্ষার প্রশ্ন কিন্তু কোচিং সেন্টারগুলো করবে না, করবেন অভিজ্ঞ শিক্ষকরা। আর তাঁরা কিন্তু প্রশ্ন করার সময় গাইড/স্পেশাল বুক হাতে নিবেন না। তাঁরা তোমার পাঠ্য বই থেকেই সিলেবাস অনু্যায়ী প্রশ্ন তৈরি করবেন।
যেটা করতে হবে, সেটা হচ্ছে প্রতিদিন তোমাকে প্রচুর পড়াশুনা করতে হবে। হ্যাঁ, প্রতিদিন ও প্রচুর। এই কয়টা দিন বাকি সবকিছুর মোহকে দূরে রেখে পড়াশুনা করে কেউ ব্যর্থ হয় নি, তুমিও হবে না ।
১. কয়টা বই পড়তে হবে?
বই বাজারে অনেক আছে। সবগুলো বই পড়ার প্রয়োজন নেই। কলেজে যেই বই পড়ে এসেছো সেই বইটাই আগে পুরো আয়ত্তে এনে ফেল। এরপর সময় থাকলে আরো দুই-একজন ভাল রাইটারের বই দেখে ফেল। তোমার প্রস্তুতি ৮০% সম্পন্ন।
২. কী পড়বো?
আমরা বোর্ড পরীক্ষার জন্য দরকারি বিষয়গুলো পড়তে অভ্যস্ত হয়ে যাই কলেজের দুই বছর। অনেক বিষয় বা টপিক প্রায় সব অধ্যায়েই থাকে যা আমরা বাদ দিয়ে যাই বা না বুঝে মুখস্থ করে থাকি। ভর্তি পরীক্ষায় এমনটা চলবে না।
তোমাকে প্রতিটি অধ্যায়ের প্রতিটি লাইন বুঝতে হবে সম্ভব হলে। কিচ্ছু বাদ দেওয়া যাবে না যদি তুমি সব জায়গায় ভাল পজিশনে চান্স পেতে চাও। মনে রাখবে ভর্তি পরীক্ষায় তোমার জ্ঞানের চেয়ে অনুধাবনমূলক প্রশ্নেরই উত্তর বেশি দিতে হবে। যদি না তুমি মেডিকেলে পরীক্ষা দাও। সেক্ষেত্রে জ্ঞানমূলক প্রশ্নের আধিক্য থাকে।
৩. শুধুই কি বই?
বইগুলো পড়ার পরে প্রশ্নব্যাংক (বিগত বছরের প্রশ্নগুলোর সংগ্রহ) থেকে ঐসব অধ্যায়ের প্রশ্নগুলো নিজে নিজে সলভ করার চেষ্টা করো। না পারলে সমাধান দেখে শিখে নাও।
এভাবে প্রতিটি বিষয়ের প্রতিটি অধ্যায় পড়ার পর সেগুলোর বড় গাণিতিক সমস্যা (BUET, RUET ইত্যাদি) এবং অবজেক্টিভ প্রশ্নগুলো (DU, KUET, SUST ইত্যাদি) অধ্যায় ভিত্তিকভাবে সমাধান করে ফেললেই তোমার প্রস্তুতি প্রায় 98% সম্পন্ন হয়ে যাবে।
৪. হাল ছাড়া চলবে না
এরপর সময় সু্যোগ হলে কোচিং এর কন্সেপ্ট বুক, গাইড ইত্যাদি দেখে নিতে পারো। আর বেশি বেশি টেস্ট/পরীক্ষা দাও। কোচিং এর প্রাপ্ত নাম্বার নিয়ে বিচলিত হবে না। পড়াশুনা চালিয়ে গেলে আসল পরীক্ষায় ঠিকই সফল হবে।
আমার দেখা অনেক বন্ধু কোচিং এ খারাপ করতো, তারা এখন বুয়েট, ঢাবিতে পড়ছে। আবার অনেকে কোচিং এ ভাল করতো কিন্তু পরবর্তীতে ভর্তি পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল লাভ করতে পারেনি।
৫. ফাঁদে পা দিও না
“এই প্রকাশনীর এক সেট বই আর দুই সেট খাতা কিনলে চান্স নিশ্চিত” বা “চান্স না পেলে টাকা ফেরত”- এমন ধরনের বিপণন প্রচারণায় প্রলুব্ধ হবে না। তোমার চান্স পাওয়া বা না পাওয়া নির্ভর করবে তোমার নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের উপর। কখনই নিজের উপর বিশ্বাস হারাবে না।
তবে মনে রাখবে, বই না পড়ে শুধু শুধু প্রশ্নব্যাংক বা বিগত বছরের প্রশ্নগুলো সমাধানের পেছনে সময় দেওয়া সময়ের অপচয়। বুঝে বুঝে বই সবটুকু পড়লে তুমি নিজেই যেকোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে। কেবল তোমাকে পরীক্ষার হলে নার্ভাস না হয়ে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। আগের বছরের প্রশ্ন ১টা/২টা ভাগ্য ভাল হলে কমন পড়বে। সবগুলো না। প্রশ্নব্যাংক তোমাকে সাহায্য করবে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশ্নের ধরন বুঝতে, এটা গুরুত্বপূর্ণ ঠিক, তবে এটাই সব কিছু না।
একটা গুজব শুনতে পাবে যে, ঢাকা ভার্সিটির পরীক্ষায় বায়োলজিতে আগের বছরের প্রশ্ন থেকে সব কমন পড়ে। এটা একদম ভিত্তিহীন। আগের ৫-১০ বছরের প্রশ্ন থেকে ২-৫ টা কমন পড়তে পারে ভাগ্য ভাল হলে। এর বেশি না। এজন্য নিয়মিত একটু একটু করে বায়োলজি বই পড়াই যথেষ্ট। আর এটা সকল বিষয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
তোমাদের জন্য শুভকামনা রইলো। পরবর্তীতে আরো গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা তোমাদের সাথে আলোচনা করবো।