বিউটি কুইন ও সংস্কৃতির রাজধানী খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজে ঘেরা নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে গা ভাসিয়ে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা একটি বিজনেস স্কুলে পড়ার স্বপ্ন হয়তো তুমিও দেখে থাকবে। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের প্রথম বিবিএ প্রোগ্রাম চালু করে অাইবিএ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (অাইবিএ-জেইউ)। ২০১৭–২০১৮ সেশনের পরীক্ষার সুবাদে অাইবিএ জেইউ পূর্ণ করবে তার ২৭ তম বছরটি। দীর্ঘ ২৬ বছরের সফলতায় অাইবিএ জেইউ পৌঁছে গেছে তার স্বর্ণশিখরে।
স্বপ্ন ছাড়া মানুষ বড় হতে পারে না তবে বুড়ো হতে পারে। স্বপ্ন অাছে বলেই ছোটবেলা থেকেই কঠোর পরিশ্রম করে অাজ এই পর্যন্ত এসেছো। এখন তোমার স্বপ্ন ছোঁয়ার পালা। জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোর মধ্যে একটি হলো এইচএসসি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার মধ্যবর্তী সময়টুকু। এই সময়েই তুমি তোমার ভবিষ্যতের বীজ বপন করবে। তাই তোমার ভবিষ্যতের স্বপ্নগুলো রঙিন করতে অাজ আমি পরামর্শ দিবো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) এর বিবিএ ভর্তি সম্পর্কে।
স্বপ্ন যতই বড়, স্বপ্ন ছোঁয়াটা ততোই কঠিন। প্রতি বছর একটি সিটের জন্য লড়ে প্রায় ১৪০ জন উচ্চমানের শিক্ষার্থী। তাই দেরি না করেই নেমে পড়ো তোমার স্বপ্ন বাস্তবায়নে।
মূলপর্বে যাওয়ার অাগে অাইবিএ-জেইউ ভর্তি পরীক্ষার কিছু খুঁটিনাটি জেনে নিই।
Institute Of Business Administration- Jahangirnagar University (IBA-JU)
ইউনিট : G
সিট সংখ্যা : ৫০
ছেলে ২৫
মেয়ে ২৫
(২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী)
২. ভর্তি পদ্ধতি :
পুরো ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় দুটি পর্যায়ে।
১. MCQ :
মোট ৭৫ নম্বরের MCQ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলা ৫ ছাড়া বাকি ৭০ নম্বরের প্রশ্ন ইংরেজিতে হয়। সর্বনিম্ন ৩৫% মার্ক পেলে পাশ বলে গণ্য হবে।
মানবন্টন:
বাংলা – ০৫
ইংরেজি – ৩০
Mathematical Aptitude and IQ – ৩০ ( সাধারণত ৫ নম্বরের অাইকিউ থাকে)
সাম্প্রতিক এবং বিশ্লেষণমূলক বিষয় – ১০
২. ভাইভা :
৫ নম্বরের ভাইভা অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত পরীক্ষা থেকে পাশকৃত, সিটের ১০ গুণ অর্থাৎ প্রথম ২৫০ জন ছেলে এবং ২৫০ জন মেয়ে- মোট ৫০০ জনকে ভাইভাতে ডাকা হয়।
সবশেষে, লিখিত ৭৫, ভাইভা ৫, এসএসসি এবং এইচএসসি‘র ফলাফলের সর্বোচ্চ ২০ নম্বর মিলিয়ে মোট ১০০ নম্বরের ভিত্তিতে মেরিট লিস্ট তৈরি করা হয়।
৩. ভর্তি যোগ্যতা :
২০১৪ সাল বা তার পরবর্তী বছর সমূহে মাধ্যমিক/সমমানের পরীক্ষা এবং ২০১৬ ও ২০১৭ সালের এইচএসসি উত্তীর্ণ সকল বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা অাবেদন করতে পারবে।
বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের উচ্চ মাধ্যমিক গণিত এবং ইংরেজিতে সর্বনিম্ন এ মাইনাস সহ মোট জিপিএ ১০.০০ তে ৭.৫০ থাকতে হবে।
মানবিক/ব্যবসায় শিক্ষা/অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের উচ্চ মাধ্যমিক ইংরেজি এবং হিসাববিজ্ঞান/অর্থনীতি/গণিত/ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনায় সর্বনিম্ন এ মাইনাস সহ মোট জিপিএ ১০.০০ তে ৮.০০ থাকতে হবে।
প্রস্তুতি :
এবার অাসি মূল পর্বে। যেকোন প্রস্তুতির প্রথম শর্ত কঠোর পরিশ্রম। প্রথমে তোমাকে প্রস্তুতির জন্য কিছু সহায়ক বই সংগ্রহ করতে হবে। তারপর বইগুলো নিয়ে ধাপে ধাপে প্রস্তুতি নিতে হবে। দরকার হলে ইন্টারনেটে বিভিন্ন লেখা, ভিডিও এর পাশাপাশি ১০ মিনিট স্কুলের নানা কুইজ আর ভিডিও দেখে শিখতে পারো।
এবার বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি নিয়ে অালোচনা করা যাক।
বাংলা :
বাংলা নিয়ে ভয়ের কোন কারণ নেই। বাংলা প্রথম পত্র থেকে প্রশ্ন তেমন দেয় না। ব্যাকরণ অংশ থেকে মূলত প্রশ্ন করে। মাত্র ৫ নম্বরের বাংলা প্রস্তুতির জন্য যেকোন একটি ভালো বই ভালোমতো পড়ে নিলে হয়। বাংলা নিয়মিত কিছু কিছু পড়ে নিবে কারণ শেষে গিয়ে পড়তে যদি দেখো সিলেবাস বড় তখন অার পড়তে ইচ্ছে করবেনা। মনে রাখবে প্রত্যেকটা নম্বর তোমার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
বই পরামর্শ :
বাংলা প্রথম পত্রের পাশাপাশি নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণ ভালোমতো পড়ে নিবে।
সাথে এই বইগুলো পাশে রেখো –
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা- সৌমিত্র শেখর
ইংরেজি:
ইংরেজি প্রধানত Vocabulary (synonyms, antonyms, prepositions, analogy, group verbs, phrase, Spelling etc.) নির্ভর। Grammar থেকে সাধরণত ৮-৯ টি প্রশ্ন থাকে। তাই Grammar এর জন্য এদিক-ওদিক দৌড়াদৌড়ি না করে vocabulary based অাইটেমগুলো পড়ে নাও ভালোভাবে। ইংরেজি পড়ার কোন শেষ নেই। যত পড়বে ততো ভাল।
ইংরেজিতে যতটুকু সময় দিবে তার ৩০% Grammar এবং বাকি ৭০% vocabulary based টপিকগুলোতে সময় দিবে। জাবিতে সাধারণত Analogy এবং synonym – antonym একটু বেশি থাকে। তাই এগুলোকে গুরুত্ব সহকারে পড়ো।
Vocabulary পড়ার ক্ষেত্রে প্রথম দিকের অবস্থা তেমন সুখকর হয়না। কিন্তু অাস্তে অাস্তে কষ্টটা কমে যায়। কারণ, যতই এগুতে থাকবে ততোই নতুন শব্দের পাশাপাশি পুরাতন শব্দগুলো সামনে চলে অাসবে, পড়তে ভালো লাগবে। বিভিন্ন বইগুলোতে অনেক কমন শব্দ থাকে। তাই একটি বই ভালোভাবে শেষ করলে পরের গুলো অনেক সহজ হয়ে যায়।
প্রস্তুতি শুরু করার অাগেই বিগত বছরের প্রশ্নগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখে নিবে
বই পরামর্শ:
Vocabulary Based :
Level 1: Barron’s SAT
Level 2: Barron’s GRE Vocabulary
এই দুটো বইতে Cliff’s এবং Barron’s TOEFL এর সবকিছু দেয়া অাছে তাই নতুন করে না পড়লেও হয় তবে তুমি চাইলে এই দুটি বই নিজের কাছে রাখতে পারো।
অনেক সময় বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার কিছু প্রশ্ন সরাসরি চলে অাসে। তাই ইংরেজির সকল Year Questions এর জন্য Competitive exam বইটি পড়ে নিতে পারো। তবে এটা প্রস্তুতির শেষের দিকে গিয়ে পড়বে। বেসিক বইগুলো ভালোভাবে পড়ে নিলে প্রশ্নব্যাংকের ৮০% এর বেশি প্রশ্ন তুমি অনায়াসে পারবে।
গণিত :
গণিত বলতে স্কুলে পড়ে অাসা সেই সাধারণ গণিত। গণিত এমন একটি বিষয় যার জন্য অনুশীলনের কোন বিকল্প নেই। যতই অনুশীলন করবে ততোই দক্ষ হবে। তাই বই, শিট নিয়ে প্রচুর পরিমাণে অনুশীলন করতে থাকো। গণিত এর প্রশ্ন যেহেতু ইংরেজিতে হয় সেহেতু স্কুলের বইগুলো বেশি কাজে দিবে। অনেকেই গণিত করতে গিয়ে হতাশ হয়ে যায়, ভালোমতো বুঝতে পারেনা। তাদের জন্য পরামর্শ হলো ধৈর্য ধরে থাকা। ধীরে ধীরে ছোটখাটো সমস্যাগুলো সমাধান করা গেলে পরেরগুলো তোমার সহজ মনে হবে। এভাবে করতে করতে অাগ্রহ বেড়ে যাবে। ইংরেজির মতো গণিতের জন্যও একই কথা, একটি বই ভালোমতো শেষ করলে পরেরগুলো অনেক সহজ হয়ে যায়।
শুরু করার সময় সহজ সমস্যাগুলো দিয়ে শুরু করতে হয়। তারপর ধীরে ধীরে কঠিন ধাপগুলোতে যেতে হয়। সহজ থেকে কঠিন ধাঁচের সমস্যাগুলো কিছু কিছু বইতে মার্ক করা থাকে। সেখান থেকে সহজ এবং মিডিয়াম গুলো করে ফেলো ভালমতো। এগুলো শেষ করলেই দেখবে গণিতের উপর তোমার মোটামুটি দখল চলে এসেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার বিগত বছরসমূহের প্রশ্নগুলোর উত্তর করে ফেলো এবার।
এখন তোমার গণিতের দখল অনেকটাই শক্ত। তাই কঠিনগুলো করে ফেলো এ বই দুটো থেকে। তারপর সময় পেলে ধীরে ধীরে বিদেশি বইগুলো পড়ে ফেলো। কারণ অনেকসময় বিদেশী বই থেকে কপি করা প্রশ্ন চলে অাসে।
অারেকটা কথা মনে রেখো, কখনো ক্যালকুলেটর ব্যবহার করবে না এবং বাংলা দেখে অংক করবে না।
অারো কিছু বই সময় পেলে পড়ে নিতে পারো –
Nova’s GRE Math Bible
Kaplan GMAT Math workbook
অাইকিউ :
এই সেকশনে একেক বছর একেকে ধরণের অাইকিউ এসে থাকে। কোন বছর আলাদা আলাদা ৫টি প্রশ্ন অাসে অাবার কোন বছর ৫ নম্বরের জন্য একটি Critical reasoning জাতীয় কিছু দেয়া হয় যেখানে মোট ৫টি প্রশ্ন থাকে। তাই Data Sufficiency, Critical reasoning, Mind games, Puzzle এ ধরণের অনেক কিছুই থাকতে পারে। সাধারণ গণিত করতে করতে বা মানসিক বয়সের কারণে একসময় এ ধরণের সমস্যাগুলো সমাধান করতে সহজবোধ্য হয়।
বই পরামর্শ : GRE Big book (Analytical অংশসমূহ)
এ দুইটা বই থেকে নিয়মিত অনুশীলন করে গেলে অাইকিউ অংশের জন্য অার তেমন কোন ঝামেলা থাকবে না।
সাম্প্রতিক ও বিশ্লেষণমূলক বিষয় :
এখানে মূলত ব্যবসায় বাণিজ্য, অর্থনীতি বিষয়ক কিছু সাম্প্রতিক এবং কিছু মৌলিক প্রশ্ন থাকে। এর বাইরে খেলাধুলা, ইংরেজি বইয়ের লেখক এসব নিয়েও মাঝেমধ্যে প্রশ্ন অাসে ২/১ টা। তাই এটার জন্য নির্দিষ্ট কোন বই বলে দিতে পারিনা। তবে MP3, বিশ্ব বিচিত্রা, অাজকের বিশ্ব, মনিটর ইত্যাদি বই থেকে ব্যবসায়, খেলাধূলা ও অর্থনীতি বিষয়ক টপিকগুলো পড়ে নিবে।
নিয়মিত পত্রিকা পড়া, টিভিতে খবর দেখা, অনলাইন ব্রাউজ করা এসব অভ্যাস অায়ত্তে অানতে হবে। পারলে প্রতিমাসের, কমপক্ষে পরীক্ষার অাগের ৪ মাসের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ভালোভাবে পড়বে। ঢাবি সি ইউনিটের পরীক্ষার অাগে বিভিন্ন কোচিং এ Management suggestion বের হয়, সেগুলো সংগ্রহ করতে পারো। সেখানে সাম্প্রতিক প্রশ্নগুলো দেয়া থাকে।
বইয়ের লিস্ট দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। মনে রাখবে এটা তোমারযেভাবেই পারো নিজেকে উৎসর্গ করো।জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
প্রস্তুতি শুরু করার অাগেই বিগত বছরের প্রশ্নগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখে নিবে কারণ প্রশ্নের ধরণ বোঝা অনেক জরুরী যেটা ভালো প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করে।
ভাইভার ৫ মার্কের জন্য ভয়ের কিছু নেই। সাধারণ ভাইভার মতই হয়। বাংলা ও ইংরেজি যে কোন মাধ্যমে হতে পারে। ভাইভার চেয়ে লিখিত পরীক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। লিখিত পরীক্ষার পর ভাইভার জন্য সাধরণত ২৫-৩০ দিন সময় দেয়া হয়।