ঢাবি ভর্তি পরীক্ষার্থীদের যে বিষয়গুলো অবশ্যই জনতে হবে

১ ঘন্টার পরীক্ষা দিয়ে তুমি হতে পারো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের একজন গর্বিত সদস্য। সবাইকে এই পরিবারে জায়গা করে দেয়া সম্ভব নয় বলেই এই পরীক্ষার আয়োজন। তুমি শিক্ষা জীবনে অনেক পরীক্ষা দিয়ে আসলেও তোমার জন্য এই পরীক্ষাটি ভিন্ন রকমের। কেমন ভিন্নতা? চলো জেনে নিই:

১। নেগেটিভ মার্কস: প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য তোমার পাওয়া নম্বর থেকে নম্বর কাটা যাবে। এ যেন নিজেদের গোল পোস্টে গোল দেবার মত! অতীতের কোন পরীক্ষায় এমনটি ছিলো না। যেমন: খ ইউনিটের প্রতিটি প্রশ্নের মান ১.২০ নম্বর। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.৩০ মার্কস কাটা যাবে। ধরা যাক, কেউ ১০ টি প্রশ্নের উত্তর দিলো, ৬ টি সঠিক, ৪ টি ভুল। অন্য পরীক্ষা হলে সে পেত ৬×১.২০= ৭.২০। কিন্তু, ভর্তি পরীক্ষায় নেগেটিভ মার্কস বাবদ তার পাওয়া নম্বর থেকে বাদ যাবে ৪×০.৩০= ১.২০। ফলে প্রাপ্ত নম্বর হবে (৭.২০-১.২০)= ৬!

২। ৬০ মিনিটে ১০০ প্রশ্ন: অতীতের কোন পরীক্ষায় এত কম সময় ছিলো না। প্রতিটি প্রশ্নের জন্য গড়ে ৩৬ সেকেন্ড সময় পাওয়া যায়! খুব তাড়াহুড়ো করলে ভুল হবে, ভুলে নেগেটিভ মার্কস। আবার, ধীরে ধীরে এগুলে অনেক প্রশ্ন পড়ার সময়ও পাওয়া যাবে না।

৩। তুমুল প্রতিযোগিতা: এটি শিক্ষা জীবনের সবচেয়ে প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরীক্ষা। এখানে ০.৫০ নম্বরের ব্যবধানে কেউ ১০০ জনকে টপকে সামনে যেতে পারে। একইভাবে ০.৫০ নম্বরের ব্যবধানে ১০০ জনের পিছনে চলে যাওয়া স্বাভাবিক। এখানে প্রতিটি নম্বরের পয়েন্টও (০.১০, ০.১২, ০.০৪ ইত্যাদি) মহা মূল্যবান! আমার অভিজ্ঞতা: ২০০৮ এর গ ইউনিটে ১২০ নম্বরে আমার স্কোর ছিলো ৯৬.০৪, মেধাক্রম ৭১ তম। ৬০ তম বন্ধুটির আমার মত জিপিএ ছিলো এবং তার স্কোর ছিলো ৯৬.২৪। ০.২০ নম্বরের ব্যবধানে ওই বন্ধু এবং আমার মাঝে ১০ জনের ব্যবধান তৈরি হয়।


৪। প্রশ্নের ধরণ: বোর্ড পরীক্ষায় সবার কথা চিন্তা করে মোটামুটি কঠিন-সহজ প্রশ্ন করা হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সে হিসেবে প্রশ্ন করে না। এখানে প্রশ্ন হবে কনফিউজ করার মত, একটু অসতর্কতায় পিছলে পড়ার মত! বেসিকে দূর্বলতা থাকলে এখানে মাশুল দিতেই হবে। অতীত ইতিহাস তা-ই বলে। আর, এখানে প্রশ্ন ফাঁস তো দূরের কথা, গুজবও ছিলো না!

৫। সম্পূর্ণ নিজের পরীক্ষা: এতকাল পরীক্ষার সময় পরিচিত বন্ধু-বান্ধবীদের সাহায্য নেয়া যেত। অপরিচিত হলেও দু একটা পরীক্ষার পর ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠতো। এই পরীক্ষায় কেউ কারোর কাজে আসবে না। একটিই পরীক্ষা। ভুল বলে দিলে আম ছালা দুটোই যাবে। কে কতটুকু ভাল তা জানা থাকে না, তাই সাহায্য লাগলেও বিশ্বাস জন্মায় না। ফলে, এতজনের ভীড়ে নিজেকে একাই মনে হবে, নিজের পরীক্ষা নিজেই দিতে হবে!

৬। বিভীষিকাময় ফেল: এই টেস্টে বিশাল সংখ্যক পরীক্ষার্থী সহজেই উইকেট বিলিয়ে দেয়! ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ও গ ইউনিটে পাশের হার ছিলো যথাক্রমে শতকরা ১৬.৫৬ জন ও ৫.৫২ জন!!! ভালো জিপিএ নিয়ে আসা শিক্ষার্থীদেরই এ অবস্থা। এসএসসি বা এইচএসসির মতো সবাই পরীক্ষা দিলে কী যে হত!

৭। সফলতার ব্যাপ্তি: মেধাতালিকায় যারা আসবে তাদের সফলতার গল্প ভর্তি হবার পরই শেষ নয়। যতই দিন যাবে, বাড়তে থাকবে তাদের চিন্তা, চেতনা, আত্মবিশ্বাস। কর্মজীবনে যে যেখানেই থাকুক না কেন, এই পরীক্ষাটি তোমাকে সারা জীবন গর্বভরে মাথা উঁচু করে চলার অধিকার বুঝিয়ে দিবে!

৮। একবারই চান্স: এখানে দিত্বীয়বারে পরীক্ষা দিয়ে ইম্প্রুভের কোন সুযোগ নেই। বড়ই নিষ্ঠুরতা!
Previous Post Next Post