যে কারণে বিশ্বের সেরা ভার্সিটির মাঝে বাংলাদেশ নেই

বিশ্বের সেরা ২০০০ ইউনিভার্সিটির মধ্যে বাংলাদেশের কোন ইউনিভার্সিটির নাম কেন নেই?

মালোয়েশিয়ার আছে, ব্রাজিলের আছে, আর্জেন্টিনার আছে, কোরিয়ার আছে, তুরস্কের আছে, ভারতের আছে এমনকি পাশের রাষ্ট্র পাকিস্তানেরও একাধিক ইউনিভার্সিটি এই তালিকায় আছে।
আসুন এবার কারনগুলো দেখি। এব্যাপারে আজকে একজন স্যারের লেখা পড়লাম। নোবেল বিজয়ী মালালা ইউসুফজাঈ আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির জন্য আবেদন করেছেন। ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ বলেছে তাকে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েই উত্তীর্ন হতে হবে, নোবেল কোটা কোন কাজে আসবে না। এখন আমাদের দেশের কথা চিন্তা করুন। উপজাতি কোটা, খেলোয়ার কোটা, মুক্তিযোদ্ধা কোটা, পোষ্য কোটা, নারী কোটা সব আদু ভাইরা ভর্তির সুযোগ পান। আমি এমনও জানি, এক মেয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেও, শুধুমাত্র টিচারের মেয়ে হওয়ায় সে এখন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ে!

আমাদের এক স্যার যিনি বর্তমানে মালোয়েশিয়ার একটা ভার্সিটির প্রফেসর তিনি বলেছিলেন, বিদেশের ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরীতে গেলে মনে হয় এটা গুরুস্তান, পিনপতন নীরবতায় সবাই যার যার পড়াশোণা করছে। আর আমাদের দেশের ইউনিভার্সিটি কী রকম সেটা নাহয় না-ই বললাম। রাত দশটার পর কেন হলের বাইরে থাকতে পারবে না, এর প্রতিবাদে আমাদের মেয়েরা মিছিল করে।(সম্ভবত রাত দশটার পর তারা বাইরে গিয়ে গ্রুপ স্টাডি করতে চায়। ভার্সিটি কর্তৃপক্ষের এরকম অমানবিক সিদ্ধান্তের আমিও নিন্দা জানাই। 

এবার আসি উচ্চশিক্ষায় গবেষণা প্রসংগে। বিদেশের ইউনিভার্সিটিগুল োতে গবেষণা খাতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করা হয়। আর আমাদের ইউনিভার্সিটিগুলোতে এ খাতে কোন বরাদ্দ নেই। বলবেন, আমরা গরীব রাষ্ট্র? না জনাব। নব্বই কোটি টাকা খরচ করে জাতীয় সংগীত গাওয়া যায়, লাখ লাখ টাকা খরচ করে আলপনা (রোড পেইন্টিং)আঁকার মতো ফালতু কাজ করা যায়, শাকিবালহাসানদের কোটি টাকা দেওয়া যায়, কিন্তু উচ্চশিক্ষায় গবেষনাকাজে টাকা নেই। ইউনিভার্সিটিকে এগিয়ে নিতে হলে, দেশকে এগিয়ে নিতে হলে ইউনিভার্সিটির রিসার্চের বিকল্প নেই।
শিক্ষকদের অবস্থা দেখুন। ফাইভ পাশ করা কাউকে যদি প্রাইমারী স্কুলের টিচার বানানো হয় কিংবা এসএসসি পাশ করার পরদিনই যদি কাউকে হাইস্কুলের টিচার বানিয়ে দেওয়া হয়, অবস্থা কেমন হবে?বর্তমানে অনার্স শেষ করতেই অনেকে ইউনিভার্সিটির টিচার হয়ে পড়েন। না আছে কোন মৌলিক গবেষনাগ্রন্থ, বিশেষ প্রবন্ধ, না আছে প্রশিক্ষন! আর ব্যাক্তিত্বহীনতা তো আছেই। এরা স্টুডেন্টদের কী শিখাবেন? আর যারা অপেক্ষাকৃত ভালো তারা বিদেশ চলে যান। সিএনজি ড্রাইভারের মত বেতনে কে চাকরি করতে চায়?

বছরে কয়েকবার শিরোনামহীন, জেমস, আইয়ুব বাচ্চুকে এনে কনসার্ট করানো যায়(ভার্সিটি কর্তৃপক্ষের অনুদান থাকে), কিন্তু বিদেশের বিখ্যাত কোন প্রফেসর/ বিজ্ঞানী/গবেষক এনে বক্তৃতা দেওয়ানো যায় না! স্টুডেন্টরা শিখবে কীভাবে? যেমন কর্তৃপক্ষ, তেমন স্টুডেন্ট! ....সবচেয়ে বড় কথা হলো এ নিয়ে কারো মাথাব্যাথা নেই। শিক্ষামন্ত্রী কিংবা শিক্ষাবিদরা এ নিয়ে চিন্তাই করেন না। দরিদ্র রাষ্ট্র হওয়ার পরও বুয়েন্স আয়ার্স কিংবা কায়েদে আজম ইউনিভার্সিটি পারলে আমরা পারবো না কেন?

এটা "ধর তক্তা, মার পেরেক" টাইপের কিছু না।প্রয়োজন ৫০/১০০ বছর মেয়াদী মাস্টার প্লান। ভুলে গেলে চলবে না,একটা দেশের উন্নতি জাতীয় সংগীত গাওয়া, ক্রিকেট খেলা কিংবা সুন্দরবনকে ভোট দেওয়ার উপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে সে দেশের ইউনিভার্সিটির শিক্ষাব্যবস্থার উপর।

Previous Post Next Post