পড়াশোনার সময় কীভাবে “না” বলবে মোবাইল ফোনকে

“এবার আর ওয়ান নাইট ফাইট না। পরীক্ষার দুইদিন আগে থেকেই শুরু করব পড়াশোনা,” ভাবল মেহনাজ। ৬:৩৫ এ সে বই-খাতা গোছানো শুরু করল যাতে ৭:০০ টার মধ্যে সে পড়াশোনা শুরু করতে পারে। ৭টা বাজতে যখন ৫ মিনিট বাকি তখন মেহনাজ চিন্তা করল, “যাই একটু ফেসবুকটা চেক করে আসি। পড়াশোনা শুরুর আগে মাইন্ডটাও ফ্রেশ হবে।”
যা ভাবা তাই। ক্যাট মিমস দেখে হাসতে হাসতে মেহনাজ যখন ঘড়ির দিকে তাকালো, সে দেখলো ঘড়ির কাটা আটের ঘরে কিন্তু বইএখনো খোলা হল না। তারপর খোলা হল বই ও শুরু হল পড়াশোনা। পাঁচ মিনিট পর হঠাৎ মোবাইলের ভাইব্রেশন। “হোয়াটসঅ্যাপের নোটিফিকেশনটা চেক করেই আবার শুরু করব পড়া,” এটা ভেবে ফোনটা আবার হাতে নেয় সে।
দারুণ সব লেখা পড়তে ও নানা বিষয় সম্পর্কে জানতে ঘুরে এসো আমাদের  পেইজ University Admission Test থেকে।
এভাবে হোয়াটসঅ্যাপের পর ইন্সটাগ্র্যাম, স্ন্যাপচ্যাট, ইউটিউব– সময় অপচয়ের চক্র যেন চলতেই থাকে। রাত ১টায় মেহনাজ আফসোস করে কেন ৬ ঘণ্টায় কোনকিছুই পড়া হল না এবং এটা নিয়ে সে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে।  
এখানে মেহনাজ চরিত্রটি কাল্পনিক হলেও এই পরিস্থিতিটি মোটেও কাল্পনিক নয়। প্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থীর পড়াশোনার সময় মনোযোগের ব্যাঘাত ও সময় অপচয়ের বড় কারণ মোবাইল ফোন। কিন্তু তাহলে প্রযুক্তির এই উপহারকে কি আমরা ব্যবহার করা বন্ধ করে দেবো? অবশ্যই না! আমরা শুধু পড়াশোনার সময়টুকুতে অপ্রয়োজনীয় মোবাইলের ব্যবহার বন্ধ করব। কিন্তু কীভাবে? এই কাজ তো এতো সোজা না। আমাদের বন্ধু মেহনাজে পারে নি তা করতে। 
এটি সহজ না হলেও রকেট-সায়েন্সের মতো কঠিন কিছুও না। কয়েকটি কৌশল অবলম্বন করেই তা করা সম্ভব। চলো, তাহলে দেখে নেই কী কী সেই কৌশল
১। বিভিন্ন অ্যাপের ব্যবহার
এই পদ্ধতিকে বলা যায় “কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা”। কিছু অ্যাপ যেমন মোবাইলের প্রতি আসক্ত করে তোলে, তেমনি বেশ কিছু অ্যাপ রয়েছে যা তোমাকে সাহায্য করবে সেই আসক্তি কাটিয়ে উঠে সময়ের চমৎকার ব্যবস্থাপনা করার। এসব অ্যাপের মধ্যে রয়েছে FOREST , Stay focused , Rescue time ইত্যাদি । এছাড়াও Pomodoro অ্যাপ বা সাধারণ টাইমারও সাহায্য করবে তোমাকে সময় অপচয়ের হাত থেকে বাঁচাতে।    
২। ফোন সুইচড অফ রাখা
সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি বলা যায় এটিই। ফোন সুইচ অন ও অফ করতে ভালোই একটা সময় লাগায়। এতে তোমার চট করে ফেসবুক বা ইন্সটায় ঘুরে আসার আগ্রহ কমে যাবে অনেকটাই। এছাড়াও Airplane Modeবা Do not disturb মোডও কাজে দিবে।তবে অনেক সময় জরুরি কলও আসতে পারে। তাই বিকল্প হিসেবে ডেটা কানেকশন, Wi-Fi অফ রাখা ও শুধুমাত্র একান্ত জরুরি কল ধরা- এই পদ্ধতিও অনুসরণ করতে পারো।
৩। ফোন অন্যরুমে রেখে আসা
এই পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য তোমার ফোন যাতে তোমার আশে পাশে না থাকে। কারণ আশে পাশে ফোন থাকলে অনেকেই আগের ২টি বাধাও অতিক্রম করে ফেলে। এ ক্ষেত্রে ফোন তুমি অন্য রুমে রেখে আসতে পারো, ড্রয়ার বা আলমারিতেও রাখতে পারো। এমন জায়গায় রাখবে যাতে তুমি পড়াশোনার সময় ফোনটি দেখতে না পারো।
৪। ফোন কারো কাছে রেখে আসা
এখানে কৌশলটি হল তুমি তোমার ফোন কাউকে দিয়ে বলে দিবে যাতে তোমাকে নির্দিষ্ট সময়ের আগে তোমার ফোন না ফেরত দেয়।এটি হতে পারে তোমার মা, বাবা, বড় ভাই, বোন, রুমমেট এমনকি ছোট ভাই-বোনও হতে পারে। যদি তোমার আত্ম-নিয়ন্ত্রণ অনেক কম হয়ে থাকে, তাহলে অনেক কাজে দিবে এই পদ্ধতি। শুধু সময় অপচয় রোধ না, তোমার আত্ম-নিয়ন্ত্রণও বেড়ে যাবে সময়ের সাথে সাথে এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে।
৫। বন্ধুদের তোমার ব্যস্ততার কথা জানানো
ফোন চেক করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা আমরা অনুভব করি যখন আমার বুঝতে পারি ম্যাসেঞ্জার বা ওয়াটসঅ্যাপে আমার জন্য কোনো নতুন টেক্সট এসেছে। অধিকাংশ সময় যে বন্ধুটি তোমাকে এটি পাঠায়, সে চিন্তা করে তুমিও হয়ত তার মতো ব্যস্ত নও।
এটি খুব সহজেই সমাধান করা যায় যদি তোমার সাথে যে বন্ধুদের কথা অনেক বেশি হয়, তাদেরকে তুমি তোমার ব্যস্ততার কথা জানাও এবং নির্দিষ্ট সময় পর টেক্সট করতে বল। এতে দু’টো জিনিস হবে–
এক: অন্যদেরকে তোমার পড়াশোনার কথা বলা তোমার নিজের জন্যও এক ধরনের রিমাইন্ডার হিসেবে কাজ করবে।
দুই: তোমার সেই বন্ধুটি যদি সময় নষ্ট করতে থাকে, তবে সেও অনুপ্রাণিত হবে সময় সচেতন হতে।       
সময় একজন শিক্ষার্থীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। অন্য যেকোন সম্পদের মতো এটি রক্ষা করতেও তাই তোমাকে যথেষ্ট প্রচেষ্টা দিতে হবে আর সকল প্রয়াসের সূচনা হয় ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে। তীব্র ইচ্ছাশক্তির জোরেই তুমি পারবে মনোযোগ বিক্ষিপ্তকারী ও সময় অপচয়কারী সব উপাদান থেকে দূরে থাকতে। শুভ কামনা।    
Admissionbd24 জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: contact.admissionbd24@gmail.com
Previous Post Next Post