ভার্সিটির প্রথম বর্ষ এবং ভালবাসা

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া ছেলে মেয়ে গুলোর মাঝে যতটা উচ্ছ্বাস, দুরন্তপনা কাজ করে ফাইনাল ইয়ারে এসে তা আর থাকেনা। প্রথম বর্ষের ছেলে মেয়েদের চোখে থাকে রঙ্গিন চোশমা, আর সেই চোশমা দিয়ে পুরো পৃথিবীকে রঙ্গিন দেখতে শুরু করে। প্রথম বর্ষের ছেলেরা স্বপ্ন দেখে সে ক্লাসে নতুন নতুন বন্ধুর সাথে নিজেকে অনেক ভালভাবে উপস্থাপন করবে। মেয়েদের কাছে সবমসময় একজন হিরো হওয়ার চেষ্টা করবে। স্কুল কলেজ লাইফে একটা প্রেমও করা হয়নি তার, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে একটা প্রেম করতেই হবে। হোক সে ব্যাচমেট অথবা ক্লাসমেট..প্রপোজ করার পর কোন মেয়ে হয়ত তাকে প্রত্যাখান করে। কারন বেশিরভাগ মেয়েরাই বাস্তবধর্মী হয়। সমবয়সী সম্পর্কগুলো বিয়ের পিড়ি পর্যন্ত খুব কমই গড়ায়। কেউ কেউ হয়তবা প্রেমের সম্পর্কে পড়ে গিয়ে বন্দী জীবন পরিচালনা করে। ছেলেটি তখন আর বন্ধুদের সময় দিতে পারেনা, সব সময়টুকু ঐ মেয়েটার জন্য বরাদ্দ রাখে।

আবার কোন কোন ছেলে আছে যারা প্রেমের ধারে কাছেও ভিড়বেনা। এরা সারাদিনটা বন্ধুদেরকে নিয়েই হৈ হুল্লোড়, গান-আড্ডা, দল বেঁধে রাত বিরাতে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়ানো, ক্যাম্পাসের লিচু, আম ও ডাব পেড়ে খেতে ব্যস্ত থাকে। এদের জীবন সম্পর্কে ভাবার কোন ফুরসতই মিলেনা।

অপরদিকে প্রথম বর্ষের মেয়েটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাইদের মেসেজের রিপ্লাই দিতে ইনবক্স সামলাতে ব্যস্ত। রিপ্লাই না দিলে আবার আছে র্যাগিংয়ের ভয়। কিছু কিছু বড় ভাই আছে যারা মেয়েদের সাথে ইনবক্সে ফ্লার্ট করতে ব্যস্ত। দুই একদিন কথা বলেই নবীন মেয়েটিকে প্রপোজ করে ফেলে। মেয়েটির যদি বিএফ থাকে সে না করে দেয়। আবার অনেকেই পরিবারের দোহাই দিয়ে কেটে পড়ে। আবার অনেক মেয়েই এরকমটা ভাবে, আমি কেন আমার ভার্সিটির ছেলের সাথে প্রেম করব? আমার জন্য তো রয়েছে বুয়েট, ঢাবির ছেলে। বুয়েট ঢাবির ছেলের আশায় থাকতে থাকতে হয়ত তাদের ফার্স্ট ইয়ার, সেকেন্ড ইয়ার চলে যায়.. থার্ড ইয়ারে এসে তার ভার্সিটিরই কোন এক বড় ভাইয়ের সাথে প্রেম করা শুরু করে। বড় ভাই যখন ক্যাম্পাস ত্যাগ করে, তখন তাদের মাঝে কমিউনিকেশন গ্যাপের কারনে রিলেশনশিপটা আর থাকেনা( সবার ক্ষেত্রে নয়)।
মেয়েটি তখন প্রথম বর্ষে প্রপোজ করা তার ব্যচমেট ছেলেটিকে বলে, দোস্ত তুই তো আমাকে পছন্দ করিস, চল আমরা প্রেম করি.. তারপর চলতে থাকে তাদের প্রেম।

অন্যদিকে প্রেম না করা ছেলেটির বন্ধু মহলে বন্ধুর সংখ্যা কমতে থাকে।কারন তার সব বন্ধুই ইতোমধ্যে এনগেজড হয়ে গেছে। সবাই তারা তাদের নিজ নিজ গার্লফ্রেন্ডকে সময় দিতে ব্যস্ত। চায়ের আড্ডায় আর তেমন কাউকে পাওয়া যায়না। অন্ধকার রাত্রে সে তখন ভাবে, একটা জিএফ থাকলে হয়ত মন্দ হতনা। কিন্তু সে ইচ্ছেটা তার আর পূরণ হয়না কোন এক অজানা কারনে।

সমবয়সী সম্পর্কে থাকা ছেলেটা চতুর্থ বর্ষে এসে বুঝতে পারে একটা ভাল জব দ্রুত সংগ্রহ করতে হবে। কারন জব না পেলে তার প্রেমিকাকে যে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলবে সে। আর সত্যিকারের ভালবাসার মানুষটাকে হারানো যে কতটা বেদনাদায়ক তা শুধু ভালবাসার মানুষটিকে হারানো ব্যক্তিটাই জানে।

চতর্থ বর্ষের ছেলেটি ভাবে বাবা মা অনেক কষ্টে আমাকে টাকা দিচ্ছে। এখন তাদের কাছে টাকা চাইতেও লজ্জা লাগে। ছোট বোনটি প্রতিবার বাসায় যাওয়ার আগে তার নতুন নতুন জামা আনতে বলে। তাই আমাকে ভাল কিছু করতেই হবে। সংসারের হালটা ধরতেই হবে। বৃদ্ধ বাবা মা আর কত কষ্ট করবে।

ফার্স্ট ইয়ারের সেই দুরন্তপনা ছেলেটি এখন আর দুরন্ত নেই। এখন সে সংসারের চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত।
ফার্স্ট ইয়ারের সেই মেয়েটি এখন চাকুরী ও স্বামী, বাচ্চা-কাচ্চা নিয়েই দিন কাটাতে ব্যস্ত।

ফার্স্ট ইয়ারের সেই রঙ্গিন চোশমা চোখে পড়া ছেলে মেয়েটির চোখে এখন রঙ্গিন স্বপ্ন নেই। সে এখন খালি চোখে স্বপ্ন দেখে ভালভাবে বাঁচতে। বাস্তবতা কি তা সে হাড়ে হাড়ে টের পেয়ে যায়। আর এটাই হয়ত জীবন, কখনো রঙ্গিন, কখনো বা ধুসর।
ভাল থাকুক সংগ্রামী মানুষগুলো

Previous Post Next Post