সাফল্য পেতে চাও? এই ৩টি সূত্র জেনে নাও!

জীবনে চলার পথে নানারকম বাধাবিপত্তির মুখোমুখি হই আমরা, হোঁচট খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ি কখনো কখনো। পরীক্ষার ফলাফল আশানুরূপ না হওয়া, পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ না পাওয়া, কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারা- এমন চড়াই-উতরাইগুলো তো জীবনেরই অংশ। কিন্তু তাই বলে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না।

এই খারাপ সময়গুলোয় আমাদের প্রয়োজন হয় একটু অনুপ্রেরণার, একটু উৎসাহের। নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য প্রয়োজন অতীতের ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার, সাফল্যের আলোকে উদ্ভাসিত হওয়ার। চলো, জেনে নেওয়া যাক খুব সহজ তিনটি বিষয়, সাফল্য এই সূত্রগুলো ধরেই আসতে পারে!

১. আন্তরিকতার সাথে কাজ করা

সবচেয়ে বেশি যেই কথাটা শোনা যায়, “আমার অনেক স্বপ্ন রয়েছে, কিন্তু আমার পরিবার তাতে রাজি নয়” অথবা “আমি যেই সাবজেক্ট নিয়ে পড়ছি সেটার প্রতি আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই”, “দেশের শিক্ষাব্যবস্থা আমার স্বপ্নগুলোকে গলা টিপে মেরে ফেলছে” ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রত্যেকটা অনুযোগে একটা জিনিস কমন- দোষটা চাপানো হচ্ছে পরের ঘাড়ে- শিক্ষাব্যবস্থা, পরিবার, সমাজ ইত্যাদির উপর।

পরের উপর দায় চাপানো খুব সহজ, কিন্তু তাতে কি আদৌ সমস্যার সমাধান হয়? জীবনটা আমার, নিজের মতো করে সাজিয়ে নেওয়ার দায়িত্বটাও একান্তই নিজের। এবং সেটা করতে হবে কাজের মাধ্যমে। আমাদের প্রিয় ব্যক্তিত্ব যারা- তরুণ প্রজন্মের সাকিব আল হাসান থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের মহারথীগণ- আমরা তাদেরকে চিনি, ভালবাসি, শ্রদ্ধা করি তাদের কাজের কারণে।

হাজারো প্রতিকূলতা তাদের জীবনেও এসেছে, কিন্তু তারা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছেন একটি কারণে- নিজের কাজের প্রতি অসম্ভব ভালবাসা এবং আন্তরিকতার জন্য।

তাই চলো আজ থেকে একটা প্রতিজ্ঞা করে ফেলি, আমাদের প্রতিদিনের কাজগুলো আমরা অসম্ভব আন্তরিকতার সাথে করবো। যেকোন কাজ সামনে আসলে নিজেকে প্রশ্ন করবো, এই কাজটি কি আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ? উত্তর যদি “হ্যাঁ” হয়, কাজটি যতোই বিরক্তিকর লাগুক না কেন আমরা সর্বোচ্চ নিষ্ঠা ঢেলে দেবো সেটি সম্পাদনে।

দেশের শিক্ষাব্যবস্থার অনেকরকম সমস্যা রয়েছে সত্যি, কিন্তু আমরা তাতে ভ্রূক্ষেপ করবো না, ক্লাসে প্রথম হয়ে সব বাধাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দেবো! পছন্দের কাজটিতে হাজারটা প্রতিবন্ধকতা? ক্রিকেটার মুস্তাফিজ কৈশোরে যদি প্রতিদিন ৪০ কি.মি. পথ পাড়ি দিয়ে অনুশীলনে যেতে পারে তাহলে আমরাও পারবো, অবশ্যই পারবো! “Greatness” মানে কেবল বিশাল কিছু করা নয়, মহত্ব মানে নিজের কাজটা যথাসাধ্য আন্তরিকতার সাথে করা, হোক বা যতোই তুচ্ছ। দিনের শেষে নিজেকে যেন বলতে পারি,

“আমার কাজের ক্ষেত্রে আমিই সেরা!”

২. সঠিক বন্ধু নির্বাচন করা

খুব চমৎকার একটি প্রবাদ রয়েছে, “A man is known by the company he keeps”

একটা মানুষ কেমন সেটা জানতে চাইলে সে কাদের সাথে চলে তাদের দেখলেই বোঝা যায়। কারণ আমরা যেই মানুষগুলোর সাথে চলাফেরা করি নিজের অজান্তেই তাদের অনেক বড় একটি প্রভাব পড়ে আমাদের জীবনে।

একটা ঈগল পাখি যদি জন্মের পর থেকে মুরগির খোঁয়াড়ে বেড়ে ওঠে, আকারে আয়তনে বিশালদেহী হওয়া সত্ত্বেও মানসিকভাবে কিন্ত তা একটি মুরগিই থেকে যাবে!

"বন্ধুত্ব মানে সবাই মিলে বিজয়ের নিশান উড়িয়ে দেওয়া"

তাই আমাদের উচিত এমন মানুষদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাদের থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। নিজ নিজ কাজের ক্ষেত্রে যারা অগ্রগামী, যারা ইতিবাচক, উচ্চাকাঙ্ক্ষী, পরিশ্রমী।

মানুষের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য হলো নিজের চেয়ে একটু হলেও নিম্নশ্রেণীর মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করা। মনে করো তুমি এমন কিছু বন্ধুর সাথে দৌড়াচ্ছো যেখানে তোমার চেয়ে দ্রুত আর কেউ দৌড়াতে পারে না। সেই প্রতিযোগিতায় তুমি বরাবরই প্রথম হবে, কিন্তু সেটি কি সত্যিই গৌরবের?

তুমি যদি এমন বন্ধুদের সাথে দৌড়াও যারা তোমার চেয়ে অনেক ভাল দৌড়বিদ, সেক্ষেত্রে তুমি হয়তো প্রথম হবে না, কিন্তু তোমার টাইমিং আগের চেয়ে অনেক উন্নতি করবে! চাপের মুখে পড়লেই কেবল মানুষ বুঝতে পারে তার ক্ষমতা আসলে কতোটা প্রবল!

বন্ধত্বু মানে শুধু আড্ডাবাজি, ঘুরাঘুরি নয়, বন্ধুত্ব মানে একসাথে কাজ করা, ছুটে চলা, প্রতিকূল মুহূর্তে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানো। বন্ধুত্ব মানে সবাই মিলে বিজয়ের নিশান উড়িয়ে দেওয়া।

তুমি যদি এখন স্টার কাবাবে খেতে যাও সাথে অনেক “বন্ধু” জুটবে, কিন্তু স্যার ক্লাসে কোন টপিকটা পড়িয়েছেন সেটা ভাল করে বোঝার জন্য গ্রুপ স্টাডি করতে চাও যদি তখন কিন্তু সবাই লাপাত্তা! হয়তো একজন পাবে, সেই হচ্ছে তোমার প্রকৃত বন্ধু, যে উচ্চাকাঙ্ক্ষী, কঠোর পরিশ্রমী, গঠনমূলক কাজে বিশ্বাসী। সফল হতে চাইলে এমন সফলকাম মানুষদের সাথেই বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে হবে।

৩.নিজেকে সেরা ভাবা

জাপানীদের চমৎকার একটা মানসিকতা রয়েছে। আমাদের সামনে যখন কঠিন কোন চ্যালেঞ্জ আসে, আমরা অনেকেই ভাবি, “আমি কি পারবো?”

জাপানীরা ভাবে, “আমি কেন পারবো না?”

কাজটা যদি আগেও কেউ করে থাকে, তখন ওরা ভাবে, “ও যদি করতে পারে তাহলে আমিও অবশ্যই পারবো!”

আর যদি এতই ভয়ানক কঠিন কাজ হয় যে কারো পক্ষেই সম্ভব হয়নি, তখন ওরা ভাবে, “যেহেতু কাজটা কেউ করতে পারেনি, আমিই প্রথম করে দেখিয়ে দেবো!”

এবং তারা সেটা করে দেখাচ্ছেও পৃথিবীজুড়ে!

১৯৫৪ সালের আগ পর্যন্ত পৃথিবীতে কেউ চার মিনিটের কম সময়ে এক মাইল দৌড় সম্পন্ন করতে পারেনি। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন চার মিনিটের কমে এক মাইল দৌড়ানো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।

রজার ব্যানিস্টার ছিলেন একজন চিকিৎসক এবং দৌড়বিদ। তিনি নিজে হিসেব করে বের করলেন চার মিনিটের কমে এক মাইল দৌড়ানো অবশ্যই সম্ভব, এবং তিনি সেটা নিজেই করে দেখালেন ১৯৫৪ সালে এক দৌড়ে!

তিনি এই কীর্তি গড়ার মাধ্যমে শত শত বছর ধরে চলে আসা ধারণাটিকে ভুল প্রমাণ করে দিলেন, এবং মজার ব্যাপার মাত্র ছয় সপ্তাহের ভেতর জন ল্যান্ডি নামের আরেক দৌড়বিদও চার মিনিটের কমে এক মাইল দৌড় সম্পন্ন করেন! তারপর আরো বহু দৌড়বিদ এ কৃতিত্ব অর্জন করেছেন।

শত শত বছর কেউ এ কীর্তি গড়তে পারেনি কারণ মানুষ এটাকে অসম্ভব মনে করে এসেছিল, ঠিক যেই মুহূর্তে রজার ব্যানিস্টার প্রমাণ করলেন এটি সম্ভব সেই মুহূর্ত থেকেই রেকর্ড ভাঙ্গা শুরু হয়ে গেল!

“কারণ বিশ্বাসের শক্তি অপরিসীম, বিশ্বাস তোমাকে আকাশছোঁয়া সাফল্য এনে দিতে পারে”।

তবে এখানে একটি কথা রয়েছে। একটা মানুষ কখন সেরাদের সেরা হয়ে উঠে? যখন সে আর সবার চেয়ে বেশি পরিশ্রম করে, সবচেয়ে বেশি অনুশীলন করে লক্ষ্যের পেছনে। তাই আজ থেকে নিজেকে প্রতিদিন বলবে, “Who am I? I AM A CHAMPION!” এবং তারপর চ্যাম্পিয়নের মতোই কাজের ঝাঁপিয়ে পড়বে!

(কোন অভিমত থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পার)

Previous Post Next Post